মোজাফফর হোসেন, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ-
রাবেয়া বেগম। বয়স ৭২ বছর। একে একে সুন্দর এ পৃথিবীর আলোর মুখ দেখিয়েছেন ৯ সন্তানের। এরমধ্যে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন প্রিয়তম স্বামী। অথচ শেষ বয়সে পাশে নেই সন্তানদের কেউ। বিধবা এই বৃদ্ধা গত ৪ জানুয়ারি অসুস্থ অবস্থায় নিজেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট আর বার্ধক্যজনিত নানা রোগ নিয়ে হাসপাতালের ‘এক্সটা ওয়ান’ বেডে ভর্তি আছেন তিনি। এক সপ্তাহ পার হলেও ৯ সন্তানের কেউ বৃদ্ধা মায়ের খোঁজ নেয়নি। রাবেয়া বেগম যশোরের মনিরামপুর উপজেলার চান্দুয়া গ্রামের মৃত জোয়াদ আলীর স্ত্রী।
বুধবার দুপুরে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, রাবেয়া বেগম ৯ সন্তানের মুখ দেখতে উদগ্রীব হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে চোখের পানিতে বুক ভাসাচ্ছেন। অথচ এই মা ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করে সব যন্ত্রনা ভুলে সন্তানকে সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। সেই মায়ের জীবন সায়াহ্নে সন্তানদের কেউ পাশে নেই। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট আর বার্ধক্যজনিত নানা রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির এক সপ্তাহ পার হলেও সন্তানদের কেউ মায়ের খোঁজ নেয়নি।
রাবেয়া বেগম ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের চান্দুয়া গ্রামের মৃত জোয়াদ আলীর স্ত্রী। তার তিন ছেলে এবং ৬ কন্যা সন্তান রয়েছে। বৃদ্ধার পাশের বেডে আছেন একই উপজেলার কামালপুর গ্রামের রেহেনা খাতুন। তিনি জানান, তিনি ৩ দিন ধরে হাসপাতালে আছি। এরমধ্যে খোঁজ নিতে বৃদ্ধার কাছে কাউকে আসতে দেখিনি। গত মঙ্গলবার কয়েকজন এসে বৃদ্ধাকে একটি কম্বল আর এক হাজার টাকা দিয়ে গেছেন।
আর এক রোগীর স্বজন হাসাডাঙ্গা গ্রামের জমিলা বেগম জানান, তিনিও কাউকে বৃদ্ধার খোঁজখবর নিতে আসতে দেখেননি।
মহিলা ওয়ার্ডের ইনচার্জ বন্ধনা রানী জানান, এই বৃদ্ধা নিজেই হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু বৃদ্ধার কোন সন্তান কিংবা আত্মীয় কখনো খবর নেন না। বৃদ্ধার ওষুধ দেয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের দেখভাল তারাই করছেন।
বৃদ্ধার ছোট ছেলে জয়পুর গুপেরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল সালামের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, মাঠে কাজ থাকায় মায়ের খোঁজ নিতে পারেননি। মঙ্গলবার রাতে স্ত্রী শিরিনাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম মায়ের খোঁজ নিতে। বাকি ভাই-বোনেরা কেনো খোঁজ নিয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে সালাম জানান, মা’র খোঁজ নিলে তাদের পয়সা খরচ হবে।
মনিরামপুর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক অণুপ কুমার বসু জানান, গত ৪ জানুয়ারি ওই বৃদ্ধা নিজেই এসে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। ভর্তির পর থেকে বৃদ্ধার কোন সন্তান কিংবা আত্মীয়-স্বজন খবর নেয়নি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেই বৃদ্ধার ওষুধ আর খাবার দেওয়া হয়। তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডের এক্সটা ওয়ান নম্বর বেডে ভর্তি আছেন।