কে,এম,মোজাপ্ফার হুসাইন
আজ শুভ বড়দিন রুহানী চার্চ মিশন স্কুল প্রাঙ্গনে শুভ বড়দিন উদযাপিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর প্রতিনিধি নেহালপুর কলেজের অধ্যক্ষ চঞ্চল ভট্টাচার্য্য। বিশেষ অতিথি ছিলেন মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, ইউপি সদস্য সেলিম আকতার, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ডাক্তার আতিয়ার রহমান, সুধান্য মন্ডল, সারথী রানী মন্ডল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও বাইবেল থেকে বড়দিনের তাৎপর্য ব্যখ্যা করেন রূহানী চার্চ বাংলাদেশ ট্রাস্টের জাতীয় পরিচালক বিশিষ্ট সাংবাদিক রেভারেন্ড জেমস আব্দুর রহিম রানা।
এসময় বক্তারা বলেন, আজ থেকে দুই সহস্রাধিক বছর আগে
জেরুজালেমের কাছাকাছি বেথলেহেম নগরীর এক গোয়ালঘরে জন্মেছিলেন খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট। ৩৩ বছরের স্বল্পস্থায় জীবনে তিনি মানুষকে শুনিয়েছেন শান্তির বাণী, ভালোবাসার কথা । হিংসা-দ্বেষ, পাপ-পংকিলতা থেকে মানুষকে মুক্ত করাও ছিল তার প্রবর্তিত ধর্মের অন্যতম মূল কথা। তার শান্তির বাণী শাশ্বত, জাতি- ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য মতবাদ প্রচারের সময় অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন যিশু। কিন্তু কোনো নির্যাতন-নিপীড়নই তাকে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। মানুষকে জয় করার হাতিয়ার ছিল তার সংযম ও সহিষ্ণুতা। বর্তমান সংঘাতময় এ পৃথিবীতে যিশুর বাণী কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যিশু বিশ্বাস করতেন ঈশ্বরের শক্তিতে । বাইবেলে বর্ণিত আছে- ‘আমি সব মন্দ আত্মাকে তাড়াই ঈশ্বরের শক্তিতে এবং তোমরা যা আমার কাছ থেকে শোনো তা আমার নয় বরং সেসব কথা পিতার, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন। বর্তমান বিশ্বের হিংসা ও পারস্পরিক অশ্রদ্ধাবোধ প্রকৃত অর্থে আত্মারই সংকট। মন্দ আত্মা মানুষকে তাড়িয়ে ফিরছে নেতিবাচকতার দিকে। মানুষের মধ্যে যিশু প্রস্তাবিত পরিশুদ্ধ আত্মার প্রতিস্থাপন ছাড়া এ সংকট থেকে মুক্তির উপায় নেই। যিশু সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ দেওয়ার কথাও শুনিয়েছেন। আধুনিক গণতন্ত্রের মর্মকথাও তা-ই সভ্যতার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, শুধু খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের জীবন ও দর্শনেই যিশুর প্রভাব পড়েনি, পুরো মানবসভ্যতাই কিছু না কিছু মাত্রায় প্রভাবিত হয়েছে তার আদর্শ, নীতি ও বিশ্বাস দ্বারা। প্রতিবছর এই দিনে বিশ্বের খ্রিস্ট বিশ্বাসীদের সঙ্গে বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও ধর্মীয় অনুভূতির পরম মমতায় আনন্দঘন পরিবেশে উৎসব পালন করে থাকে। তবে বিশ্ব অস্থিরতা উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়লেও পড়তে পারে কিন্তু সম্প্রীতির বাংলাদেশে উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এ বছর বড়দিন পালিত হচ্ছে। স্বভাবতই এ উৎসবের অনুষ্ঠানমালা হবে উৎসব মুখর। তবে খ্রিস্ট বিশ্বাসীরা বড়দিনে বাহ্যিক উৎসব-আয়োজনের ঊর্ধ্বে তাদের হৃদয়-মন ও অন্তরাত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে প্রয়াসী হন। বড়দিনের উৎসবে মুসলমান সম্প্রদায়ও যোগ দিয়ে থাকে এবং আনন্দ ভাগ করে নেয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী অংশ নিয়েছিলেন, তাদের অনেকে শহীদ হয়েছেন। বিভি- প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও মুসলমান, খ্রিস্টান, হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় অংশ নিয়েছেন। নৃগোষ্ঠীর ধর্মাবলম্বীরাও একাকার হয়ে আছেন। এ দেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের সঙ্গে। বড়দিন উপলক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশে অবস্থানরত খ্রিস্টানসহ পৃথিবীর সব খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে জানাই শুভেচ্ছো। বড়দিনের উৎসব সর্বজনীনতা লাভ করুক। এ ধর্মীয় উৎসবে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে সংহতি গড়ে উঠবে এবং তা বিশ্বভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
শেষে বিশাল আকৃতির কেক কেটে ও মধ্যাণ্য ভোজের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনুষ্ঠানে দুই শতাধিক নারী পুরুষ ও শিশু উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply