রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ছাত্তার মেম্বারের পাড়া ও চর করনেশন এলাকায় পদ্মা নদীর চর থেকে অবাধে মাটি-বালু লুট চলছেই। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিনে-রাতে বিভিন্ন উপায়ে মাটি ও বালু কাটছে একটি চক্র।
অবৈধভাবে চর কর্নেশন এলাকায় থেকে মাটি কাটার দায়ে গত ১৫ নভেম্বর দুই ব্যক্তিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করে আবারও মাটি-বালু উত্তোলন করছে চক্রটি।
জানা গেছে, প্রশাসনের অনুমোদন না থাকলেও ‘ওপর মহলকে’ ম্যানেজ করে পদ্মার চর থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন চলছে। তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় নদীপাড়ের বাসিন্দা ও কৃষকরা ভয়ে মুখ খুলছেন না। দিনে সেখানে কেউ থাকেন না, সন্ধ্যার পরপরই চলে প্রস্তুতি। বিভিন্ন জায়গা থেকে শত শত ড্রাম ট্রাক এনে সারিবদ্ধ করে রাখা হয় চরকরনেশন এলাকায়। এশার নামাজের পরপরই শুরু হয় বালু উত্তোলন। আশপাশের কঠোর নিরাপত্তার বলয়ে এই ট্রাকগুলো নির্ধারিত বিভিন্ন ইটভাটায় বালু ও মাটি পৌঁছে দেয়।
রাজবাড়ী-২
সরজমিন দেখা গেছে, মাটি ও বালুবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে দৌলতদিয়ার আক্কাস আলী হাই স্কুলের পেঁছনের রাস্তাটি ইতোমধ্যে ধসে গিয়ে খানা-খন্দে পরিণত হয়েছে। ধুলোবালিতে ওই এলাকার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় আক্কাস আলী হাই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ধুলোবালির মধ্যে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। এতে বর্ষাকালে পদ্মা নদীতে ভাঙনের আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। শত শত বিঘা ফসলি জমিও হুমকির মুখে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক বলেন, ‘দিনে খুব সতর্কতার সাথে মাটি কাটে তারা। সন্ধ্যার পর থেকে চলে পুরোদমে মাটি কাটার কাজ। আমরা কিছু বলতে পারি না। অথচ যেখানে থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তার সঙ্গেই আমাদের কৃষি জমি।’
কারা মাটি ও বালু উত্তোলন করছে এ বিষয় জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘জেলাল, রিপনদের নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনায় মাটি কাটা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত। প্রশাসন এগুলো দেখেও দেখেনা। আমাদের দাবি, অনতিবিলম্বে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা বন্ধ হোক। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
রাজবাড়ী-৩
মাটি কেটে ট্রাকে লোড-আনলোডের হিসাবের কাজে ব্যস্ত মুসা জানান, তিনি মাটি কেটে কোন ইটভাটায় যাবে সেই হিসাব করেন। মাটি কে কাটছে এ কথা তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘রিপন ভাইয়ের নির্দেশে মাটি কাটা হচ্ছে।’
অবৈধভাবে পদ্মা নদীর পাড় ও চর থেকে মাটি-বালু কেটে বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রিপন, জেলালের মোবাইল ফোনে একাধিকার কল করা হলেও রিসিভ হয়নি।
পদ্মার চর থেকে ভেকু দিয়ে মাটি ও বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘জেলা রাজস্ব সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে মাটি ও বালু কাটার কোনও সুযোগ নেই। যারা রাতে মাটি কাটে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে নিয়মিত মামলা করা হবে। এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ থানাকে বলা হয়েছে। অচিরেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।