রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি।
আর্থিক সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে রাজবাড়ীর একমাত্র শিশু হাসপাতাল। এক তলা ভবনের চার কক্ষের হাসপাতালটি বর্তমানে জরাজীর্ণ ভূতের বাড়িতে রূপ নিয়েছে। জেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল না থাকায় নবজাতকসহ শিশুদের চিকিৎসার জন্য যেতে হচ্ছে পাশের জেলা ফরিদপুরে। এতে মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্বজনরা।
রাজবাড়ী পৌরসভা সূত্র জানা যায়, ১৯৯৫ সালে রাজবাড়ী পৌরসভার উদ্যোগে শহরের নতুনবাজার এলাকায় পৌর শিশু হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর সেখানে একজন চিকিৎসক রোগী দেখে শুধু ব্যবস্থাপত্র দিতেন। এভাবেই চলেছে ২২ বছর।
সবশেষ ওই হাসপাতালের দায়িত্বে ছিলেন পৌরসভার মেডিকেল অফিসার ডা. আবদুর রশিদ। ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেয়ার পর হাসপাতালের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
ডা. আবদুর রশিদ জানান, তিনি ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে রাজবাড়ী পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। পৌরসভার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পৌর শিশু হাসপাতালে প্রতিদিন (ছুটির দিন বাদে) দুই ঘণ্টা করে রোগী দেখতেন। রোগী দেখে শুধু ব্যবস্থাপত্র দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল কার্যক্রম। তা সত্ত্বেও প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতেন।
এই হাসপাতালটি পৌরসভার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে একমাত্র শিশু হাসপাতাল বলে জানান ডা. আব্দুর রশিদ।
সরেজমিন দেখা যায়, ময়লা-আবর্জনা আর আগাছায় চারপাশ ভরে যাওয়ায় ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে শিশু হাসপাতালটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পাঁচ উপজেলা মিলিয়ে ১১ লাখ মানুষের এই জেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল না থাকায় প্রতিনিয়তই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। শিশুদের জরুরি চিকিৎসার জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গেলে বেশির ভাগ সময়ই পাশের জেলা ফরিদপুরে পাঠানো হয়। এ ছাড়া রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভালো কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই। এসব ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবার সহজে অন্য স্থানে যেতে পারলেও বিপাকে পড়েন নিম্ন আয়ের মানুষজন।
তাই জেলাবাসীর দাবি, বন্ধ থাকা হাসপাতালটি একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল হিসেবে চালু করে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হোক।
রাজবাড়ী পৌরসভার বাসিন্দা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালটি যখন চালু ছিল, তখন শিশুদের নিয়ে সেখানে গেলে তাৎক্ষণিক ডাক্তার দেখানো যেত। এখন সেই সুযোগ নেই। সদর হাসপাতালই আমাদের ভরসা। কিন্তু সেখানে ভালো শিশু চিকিৎসক নেই। এ জন্য শিশু হাসপাতালটি চালু করা খুবই জরুরি।’
বিষয়টি নজরে নিয়ে শিগগিরই শিশু হাসপাতালটি চালুর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র আলমগীর শেখ তিতু।
তিনি বলেন, ‘আমার আগের মেয়র সাহেব হাসপাতালটি বন্ধ করে দেন। আমি পৌরবাসীকে কথা দিয়েছি হাসপাতালটি পুনরায় চালু করব। এ জন্য আমি পরিষদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। দ্রুতই অর্থের ব্যবস্থা হবে। তখন আমরা নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেব। দেশে বড় কোনো বিপর্যয় না ঘটলে খুব শিগগিরই হাসপাতালটি চালু করা হবে।’