বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বাগেরহাটের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপণ করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলায় ২ হাজার ১৪০ টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ৭৫০টি ঘের ও পুকুরের মাছ। এতে প্রায় কোটি টাকার মত ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা ৮৫০ হেক্টর রো্পা আমনের জমি, ৩৭৫ হেক্টর শীতকালিন সবজি, ১৭ হেক্টর পান বরাজ, ১১০ হেক্টর কলা, ২০ হেক্টর মরিচ, ৭ হেক্টর পেঁপে ও ৬ হেক্টর বিভিন্ন শীতকালিন সবজির বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভারি বর্ষন ও ঝড়ে এসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মোংলা আবহওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী সোমবার একদিনে জেলায় ২১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর প্রভাবে প্লাবিত হয়েছে জেলার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। তবে এবারের ঝড়ে কোন মানুষ আহত বা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে সুন্দরবনের কোন বন্য প্রাণির ক্ষতি না হলেও জেলে-বাওয়ালী ও বন্য প্রাণীদের জন্য সংরক্ষিত মিঠা পানির ৭ টি পুকুরে নোনাপানি প্রবেশ করে এবং প্রায় এক কিলোমিটার চলাচলের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পূর্ব সুন্দর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার বেশকিছু রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া, পঞ্চকরণ, বারুইখালী, বাগেরহাট সদরের মাঝিডাঙ্গা, কার্তিকদিয়া, যাত্রাপুর, কচুয়ার নরেন্দ্রপুর, পদ্মনগর, গোপালপুর, ভান্ডারখোলা, শরণখোলার সাউথখালী, খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, ধানসাগরসহ বিভিন্ন এলকার অন্তত দুইশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ের ফলে বাগেরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির অন্তত ৩৫টি খুটি ও বেশকিছু সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার ৭৫০টি মৎস্য খামারের চিংড়ি ভেসে গেছে। এতে মাছ চাষীদের প্রায় ৮৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাষীদের দ্রুত মৎস্য ঘের সংস্কার করে পুনারায় মাছ চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলায় বেশকিছু আমনের ক্ষেত, মৌসুমি সবজি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পানি নেমে না গেলে কৃষকদের আরও বেশি ক্ষতি হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বাগেরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহা ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ নুরুল হোসাইন বলেন, ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের ফলে আমাদের অনেক খুটি ও তার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যার ফলে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। ক্ষতিগ্রস্থ বৈদ্যুতিক লাইন সংস্কার করতে ঠিকাদার ও আমাদের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে শতাধিক টিম ঘটন করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, যতদ্রুত সম্ভব বাগেরহাটে বিদ্যুৎ সঞ্চালন স্বাভাবিক করা হবে।
ক্ষতিগ্রস্থদেরকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ আজিজুর রহমান।