রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি।
আগামী ১৭ অক্টোবর রাজবাড়ী জেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে ভোট গ্রহনের বাঁকী আর মাত্র কয়েকদিন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করলেও ধরানা করা হচ্ছে ভোটের লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনিত সফিকুল মোরশেদ আরুজ ও বিদ্রোহী প্রার্থী দীপক কুন্ডুর মাঝে। এছাড়া নির্বাচনে জেলার ৫ উপজেলায় ৩২ জন সদস্য ও ৮ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রতিদ্বন্দীতা করছেন।
ইতিমধ্যে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় এলাকাসহ বিভিন্নস্থানে ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের পোস্টার ও বিলবোর্ডে। এখন জেলার সর্বতই আলোচনার বিষয়বস্তু কে হচ্ছেন জেলা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান ও সদস্য। তবে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ ও প্রচার-প্রচারনার মধ্য দিয়ে প্রার্থী ও তার সমর্থকরা ভোট প্রার্থনায় প্রতিনিয়তই ছুটছেন ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান/মেয়র ও সদস্য (ভোটার)দের কাছে। ফলে জমে উঠেছে নির্বাচন।
এদিকে ভোট গ্রহনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই একে অপর প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।
জানাগেছে, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনিত একেএম শফিকুল মোরশেদ আরুজ (তালগাছ), বিদ্রোহী প্রার্থী দীপক কুমার কুন্ডু (মোটর সাইকেল) ও সতন্ত্র প্রার্থী ইমামুজ্জামান চৌধুরী (আনারস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানাগেছে, রাজবাড়ী জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলার ৫ টি উপজেলা, ৩ টি পৌরসভা ও ৪২ টি ইউনিয়নের ৫৯৮ জন জনপ্রতিনিধি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এবং ভোট হবে ইভিএমএ।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক ব্যক্তিরা জানান, এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি হবে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের হলফনামায় ব্যাংক/ব্যালেন্স না দেখালেও তাদের টাকার অভাব নাই। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সফিকুল মোরশেদ আরুজ, তিনি সম্ভ্রান্ত ও ধর্ন্যাড্ড পরিবারের সন্তান। তবে একুট চাপা সভাবের। কিন্তু নির্বাচনে জয়ের জন্য টাকা খরচ করতে দিধাবোধ করবেন না। আর বিদ্রোহী প্রার্থী দীপক কুন্ডুর রয়েছে অবৈধ বালু ও ক্লিনিক ব্যবসা। এবং তিনিও প্রচুর টাকা খরচ করবেন। কিন্তু তিনি যে কোন দেশের নাগরিক তা বোঝা কষ্ট। কারণ তিনি এদেশে ছাড়া তার পরিবারের সবাই ভারত থাকেন। তাছাড়া তার স্বভাব চরত্রি ভাল না। এরআগে তার একটি নারী ঘটিত ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিলো। অন্যপ্রার্থী ইমামুজ্জামান চৌধুরী চাইলেও প্রচুর টাকা করতে পারবেন। তারা আরও জানান, এবার ভোটের লড়াইয়ে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য বড় কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নাই। ফলে নিজেদের মধ্যে চলছে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ।
ভোটাররা বলেন, সব প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ভোটের জন্য তাদের কাছে আসছে। এবং নানা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। কিন্তু তারা যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। এবং ভোটের জন্য কোন প্রার্থীর থেকে তারা কোন টাকা বা অন্য কোন সহযোগিতা নিচ্ছেন না। তাছাড়া প্রার্থীরাও তাদের কোন অফার করে নাই।
১ নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী আজম মন্ডল ও মোঃ শওকত হাসান বলেন, সকল জনপ্রতিনিধি ভোটারের কাছে তারা যাচ্ছেন। তবে কাউকে কোন টাকা দিচ্ছেন না। এবং টাকা দিয়ে ভোট কেনার কোন পরিকল্পনা তাদের নাই। বিজয়ী হলে সকল প্রতিনিধিকে নিয়ে কাজ করবেন।
৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী আবুল কাশেম সরোয়ার বলেন, এই ওয়ার্ডে তিনি ও গোবিন্দ কুন্ডু প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী ও তার সমর্থকরা বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে ভোটারদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এবং ভোট গ্রহনের দিন কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনা করছে তিনি। ফলে সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্নের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী গোবিন্দ কুন্ডু।
বিদ্রোহী প্রার্থী দীপক কুমার কুন্ডু বলেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ রটানো হচ্ছে। সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হলে তার মোটর সাইকেল প্রতীক বিজয়ী হবে। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আচরণ বিধি লঙ্গন করে প্রচারনা চালাচ্ছেন। এবং তার সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, অবৈধ নয়, যথাযথ নিয়ম মেনে ইজারা নিয়ে তিনি বৈধ ভাবে বালুর ব্যবসা করেন। তাছাড়া তিনি দৈত নাগরকি না। যদি কেউ প্রমান করতে পারে তিনি দৈত নাগরিক, তাহলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করুক। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অশ্লীলতার বিষয় সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ব্যক্তিগত ইমেজ ক্ষুন্ন করতে এটা করা হচ্ছে। নির্বাচন শেষে জয়/পরাজয় যেটাই হোক না কেন, তিনি অপপ্রচারকারী বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান।
আওয়ামী লীগ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী একেএম শফিকুল মোরশেদ আরুজ হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। ভালবাসার জায়গা থেকে ভোটাররা তাকে তালগাছ প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। তার সাথে আরও দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করছেন করছেন। এরমধ্যে একজন তাদের দলীয়। ইতিমধ্যে পৌর কমিটি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও পড়ে বহিস্কার করে জেলা কমিটি বরাবার সুপারিশ করেছেন।
জেলা প্রশাসক ও নির্বাচন রিটানিং কর্মকর্তা আবু কায়সার খান জানান, নির্বাচনের আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে সার্বক্ষনিক নজরদারি করছেন। তাছাড়া নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করতে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।