রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে জুঁই আক্তার (৮) নামে ব্যাক স্কুলের ২য় শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের হাজী আব্দুল গফুর মন্ডল পাড়ার আ. মান্নান শেখের মেয়ে। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) একই গ্রামে স্কুলছাত্রীর নানা বিল্লাল বেপারির বাড়িতে তার মৃত্যু হয়।
জুইঁকে তার সৎ বাবা আবুল কালাম (৩৫) খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কালাম রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের হাবিবুর মন্ডলের ছেলে।
প্রায় ৪ বছর আগে জুঁইয়ের বাবা মান্নান ও মা শিলা আক্তারের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর তার মায়ের আবুল কালামের সাথে বিয়ে হয়। তার বাবাও একই এলাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করে নতুন সংসার গড়ে। তবে জুঁইয়ের মা প্রায় ১ বছর আগে সৌদি আরবে থাকা তার মায়ের কাছে কাজের সন্ধানে চলে যায়। বাবা-মা হারা হয়ে যাওয়া জুইয়ের ঠাঁই হয় নানার বাড়িতে।
জুঁইয়ের নানা বিল্লাল বেপারি বলেন, তার নাতির কোন অসুখ-বিসুখ ছিল না। বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টার দিকে স্কুল থেকে সে ভালোভাবে ফিরে আসে। এরপর গোসল ও খাওয়া সেরে ঘরের মধ্যে মোবাইল ফোনে গেম খেলছিল। এরমধ্যে তার সৎবাবা কালাম তার বাড়িতে আসে। তার সাথে প্রাথমিক কথা বলে জুঁইয়ের খোঁজ করে। আমি তার ঘরে থাকার কথা বললে সে ঘরের ভেতরে চলে যায়। এ সময় তার হাতে একটা ছোট্ট পোটলা ছিল। তাতে খাবার জাতীয় কিছু ছিল। ঘরের মধ্যে ৮/১০ মিনিট থাকার পর কালাম বাইরে বের হয়ে আসে। এরপর আবারো ভেতরে গিয়ে পুনরায় ফিরে আসে। এরপরই জুই চিৎকার দিয়ে অস্থিরতা ও বুকে ব্যাথার কথা বলে। অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে পড়লে আমরা তাকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এরপর আমার পরিবারের লোকজন ও উত্তেজিত এলাকাবাসী কালামকে দোষারোপ করে তাকে কয়েকটি চড়থাপ্পড় মারে এবং ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। জুইয়ের মৃত্যুর খবরে প্রবাসে থাকা তার মা ও নানী শোকে ভেঙে পড়েছেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক ন্যায় বিচার দাবি করছি।
অভিযুক্ত সৎবাবা আবুল কালাম মুঠোফোনে বলেন, জুঁইয়ের মৃত্যুর সাথে আমি কোনভাবেই জড়িত নই। আমি তাকে খুব ভালোবাসতাম। আমি এসে ওকে ঘরের মধ্যে ঘুমাতে দেখি। এরজন্য ওকে ডেকেও তুলিনি। তাকে বিষাক্ত কোন কিছু খাওয়ানোর প্রশ্নই ওঠেনা। প্রায় ওর বয়সী আমার প্রথম স্ত্রীর ঘরে আমারও একটি মেয়ে রয়েছে। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আমি জুইয়ের মা’কে বিয়ে করি।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, শিশু জুঁইয়ের মৃত্যুর বিষয়ে তার নানা বৃহস্পতিবার রাতে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের আলোকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।