রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি।
এক যুগ ধরে বন্ধ ৫১৩ নম্বর লোকাল ট্রেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে রেলওয়ে স্টেশনের বোর্ডে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে রেলওয়ের দুই স্টেশনের একটি ছয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। জনবল সংকটে ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আন্ত নগর দুটি ট্রেন প্রত্যাহারের পাশাপাশি অন্য একটি লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় উপজেলার দৌলতদিয়ায় অবস্থিত গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশনটি ট্রেন সংকটে ধুঁকছে।
বেসরকারিভাবে পরিচালিত একটি মেইল ট্রেন ও একটি লোকাল ট্রেন দিয়ে কোনোরকম চলছে স্টেশনটির কার্যক্রম। এদিকে শিলিগুড়ি নামে পরিচিত ৫১৩ নম্বরের লোকাল ট্রেনটি প্রায় এক যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকা কোনো ট্রেন সময়সূচিতে থাকার কথা নয়। অথচ অস্তিত্বহীন ৫১৩ নম্বর ওই লোকাল ট্রেনটি রেলওয়ের বর্তমান সময়সূচিতে সচল রয়েছে।
রেলওয়ের গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশন অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ ঘাট-খুলনা-রাজশাহী রেলপথের গোয়ালন্দ বাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। সেখানে স্টেশন মাস্টার পদে একজন, সহকারী স্টেশন মাস্টার একজন, পয়েন্টসম্যান তিনজন এবং গেটম্যান (পাহারাদার) দুজনসহ সব পদে প্রয়োজনীয় লোকবল ছিল। প্রতিদিন ওই স্টেশন থেকে বিভিন্ন ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করত এলাকার হাজারো মানুষ। পরে সব পদ শূন্য হয়ে পড়ায় রেলওয়ের ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ বাজার স্টেশনটি গত ছয় বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে।
এদিকে উপজেলার দৌলতদিয়ায় অবস্থিত রেলওয়ের গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশন। দুটি আন্ত নগর ট্রেন প্রত্যাহারের পাশাপাশি অন্য একটি লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় ব্যস্ততম ওই স্টেশনটি এখন ট্রেন সংকটে ধুঁকছে। রাজশাহী-গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশনের পথে নিয়মিত চলাচল করত মধুমতি এক্সপ্রেস নামের আন্ত নগর ট্রেন। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশন থেকে প্রত্যাহার করে ফরিদপুরের ভাঙায় স্থানান্তর করা হয়। এর আগে খুলনা-গোয়ালন্দ ঘাটের পথে চলাচলকারী তিতুমীর এক্সপ্রেস নামের অন্য আন্ত নগর ট্রেনটি প্রত্যাহার করে রাজশাহী-চিলাহাটি স্টেশনের পথে স্থানান্তর করা হয়।
অন্যদিকে গোয়ালন্দ ঘাট-পার্বতীপুর পথে নিয়মিত চলাচল করত শিলিগুড়ি নামের পরিচিত অন্য একটি লোকাল ট্রেন। রেলওয়ের ৫১৩ নম্বর ওই লোকাল ট্রেনে প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা স্বল্প খরচে বিভিন্ন মালপত্র আনা-নেওয়া করতেন। পরে ইঞ্জিন ও বগি সংকটের কারণ দেখিয়ে ২০১২ সাল থেকে লোকাল ট্রেনটি পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে প্রায় এক যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে ট্রেনটির চলাচল। তবে ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা রেলওয়ের নতুন টাইমটেবিলে ট্রেনটি সচল বলে সুস্পষ্টভাবে লিখিত রয়েছে।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ বাজার ব্যবসায়ী পরিষদের নবনির্বাচিত সভাপতি সিদ্দিক মিয়া বলেন, শিলিগুড়ি নামে পরিচিত ওই লোকাল ট্রেনটি বন্ধ থাকায় গোয়ালন্দঘাট-পার্বতীপুর রেলপথ এলাকার বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন। রেলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া মিটিয়ে সড়কপথে যাতায়াত ও মালপত্র পরিবহনে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
গোয়ালন্দ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মফিজুল হক বলেন, রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালন্দ বাজার স্টেশনটি বন্ধ হয়ে আছে। পাশাপাশি পাহারাদারের অভাবে গোয়ালন্দ পৌর শহরের ব্যস্ততম স্টেশন সড়কে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ লেভেলক্রসিংটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রয়োজনীয় প্রতিবন্ধক থাকলেও বিভিন্ন ট্রেন চলাচলের সময় ওই লেভেলক্রসিংয়ে তা নামানো হয় না। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
রেলওয়ের গোয়ালন্দ ঘাট (দৌলতদিয়া) স্টেশন মাস্টার মনির আহম্মেদ বলেন, বর্তমান এই স্টেশনে বেসরকারিভাবে পরিচালিত একটি মেইল ট্রেন ও একটি লোকাল ট্রেন চালু রয়েছে।
রেলওয়ের রাজশাহী জোনের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, জনবল সংকটের কারণে গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনসহ আরো অনেক স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। সংকট নিরসনে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।