রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি।
রাজবাড়ীর একমাত্র মর্গে নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে ময়নাতদন্তের কাজ চলছে। মরদেহ কাটা-ছেঁড়া করা হয় হাতুড়ি-বাটাল, ছুরি-চাকু ও প্লায়ার্স দিয়ে। মর্গে কোনও ডোম নেই। মরদেহ কাটা-ছেঁড়ার কাজ করেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। একটি মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে সময় লাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এর ফলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেতে সময় লাগছে বেশি।
জেলার একমাত্র মর্গটি রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে শহরের ড্রাই আইস ফ্যাক্টরি এলাকায় অবস্থিত। এই মর্গে মরদেহ কাটার কাজে এখনও সম্বল হাতুড়ি-বাটাল। অথচ আধুনিক মর্গগুলোতে ইলেকট্রিক ‘স’ (করাত) ব্যবহার করা হয়। মর্গে ভেন্টিলেশন ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও নেই। চিকিৎসকদের বসার জন্য নেই কোনও আলাদা কক্ষ।
জানা গেছে, মর্গের পানির পাম্প চুরির পর তা আর কেনা হয়নি। এ কারণে সেখানে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নেই। ডোমের পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এ কারণে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দিয়ে মরদেহ কাটানো হয়। তবে মর্গে মরদেহ সংরক্ষণের জন্য একটি মরচুয়ারি কুলার (মরদেহ সংরক্ষণের ফ্রিজ) থাকলেও কোনও নৈশপ্রহরী নেই। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের দোতলার ছোট্ট একটি কক্ষে ভিসেরা (নমুনা) রাখা হয়। নমুনা পরীক্ষাগারে দ্রুত পাঠানোর কথা থাকলেও তা সঠিকভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেতে সময় লাগছে বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশেষজ্ঞ ও উপযুক্ত যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে অনেক আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে জনমনে সন্দেহ, উদ্বেগ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এমনকি অনেক নির্মম হত্যাকাণ্ডের ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের কারণে তা আত্মহত্যা হিসেবে মেনে নিতে হয় পুলিশ, আদালত ও স্বজনদের।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট উজির আলী শেখ বলেন, ‘রাজবাড়ীতে মর্গে যে ভিসেরা আলামত রাখা হয়, সেগুলোর অবস্থা আরও উন্নত করা দরকার। আলামত তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষাগারে পাঠানো দরকার। মর্গ আধুনিক না হলে, কম-বেশি ভুল থেকেই যাবে। মর্গে কাটা ছেঁড়ার আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকতে হবে। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডোম থাকতে হবে। একই সঙ্গে কাজের প্রতি মনোযোগ থাকা দরকার সংশ্লিষ্টদের।’
পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান বলেন, ‘মামলার তদন্তে ময়নাতদন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও রাজবাড়ীতে তা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে তদন্ত। তাছাড়া রাজবাড়ী মর্গে ডোমের পদ শূন্য। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলেও এটাই বাস্তব। একজন ক্লিনারকে দিয়ে ওই সব কাজ করানো হচ্ছে। ফলে অনেক প্রতিবেদনেই ভুল তথ্য আসে।’
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহিম টিটোন বলেন, ‘রাজবাড়ীর যে মর্গ রয়েছে, তা হাসপাতাল থেকে প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে। রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ২৫০ শয্যার নির্মাণাধীন কাজ শেষ হলে সেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত মর্গ করা হবে।