অমল কৃষ্ণ পালিত যশোর জেলা প্রতিনিধি:
যশোর সদরের বসুন্দিয়ার জগন্নাথপুর খান পাড়ায় আড়াই বিঘা জমিতে মাল্টার চাষ করে সফল চাষি মোঃ বাচ্চু খান। ইতিমধ্যে বাগান জুড়ে মাল্টা গাছে ফল এসেছে। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই পরিপক্ক মাল্টা বাজারজাত করতে পারবেন তিনি। এ বছর গাছে আশানুরূপ ফল এসেছে। পাঁচ লক্ষাধিক টাকার মালটা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্ৰামের নিজ বাড়ি এলাকায় তার নিজস্ব জমিতে প্রায় পাঁচ বছর আগে (২০১৭সালে) বরিশাল থেকে বারি১ জাতের চারা সংগ্রহ করে শখ এবং স্বপ্ন পূরণ করতে শুরু করেন মাল্টার বাগান। চাষি বাচ্চু এই প্রতিনিধিকে জানান, তার কৃষি কাজের প্রতি বরাবরই আগ্ৰহ ছিল, সেই অনুপ্রেরণায় মালটা চাষের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরপর কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মাল্টা চাষ সম্পর্কে ধারণা নেন। এক পর্যায়ে ভাল চারা কোথায় পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। চারার ব্যাপারে যোগাযোগ হয় বরিশাল জেলার একটি বাগানে (নার্সারিতে)। সেখান থেকে ২শত বিশ টি চারা এনে জমিতে রোপণ করেন । নিবিড় পরিচর্যা আর যত্নে চারাগুলি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। প্রথম বছরেই গাছে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। প্রথম বছর দুইশত গাছে কম-বেশি ফল এসেছে। গাছ ভেদে ২০ থেকে ৫০টি পর্যন্ত ফল ধরেছে। প্রথম বছর তুলনামুলকভাবে ফল কম ধরলেও সব মিলিয়ে প্রথম বছরে এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা টাকার মাল্টা বিক্রি করেন। এ বছর ব্যাপক ফলন হওয়ায় প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রির আশা করছেন তিনি।
চাষী বাচ্চু আরো বলেন, মাল্টা গাছে মাঝে মধ্যে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। তবে এ ব্যাপারে ইউনিয়ন ও উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করে তা দমন করা সম্ভব হয়েছে। বাগানে সঠিকভাবে পরিচর্যা ও ফলন ভাল হলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হতে পারব। তিনি বাগানে মাল্টা চাষের পাশাপাশি দেশি জাতের ওল,ঝাল,কাগজি লেবু,কূল দাজিলিং কমলা, পাকিস্তানি কমলা সহ অনেক প্রজাতির ফল এবং সবজির চাষ করেন।
এদিকে মাল্টা চাষের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় কৃষকদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক চাষীই মাল্টার বাগান দেখতে ভিড় করছে এবং চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছেন। আগামীতে মাল্টা চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় একাধিক চাষী। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন পেশার লোকজন মাল্টা বাগান পরিদর্শনে আসছেন এবং এলাকায় অনেক চাষী নতুন বাগান তৈরির আগ্রহ দেখিয়েছেন।
কেফায়েত নগর গ্ৰামের আবু তাহের বলেন, খবর শোনার পর আমি বাগানটি পরিদর্শনে যাই। সেখান থেকে কাঁচা অবস্থায় মাল্টা রস করে খেয়েছি। স্বাদ খুব ভাল। একজন চাষী সাহস নিয়ে এত বড় বাগান গড়ে তুলেছে, দেখে আমি খুব মুগ্ধ হয়েছি। আমিও একটি বাগান করার চিন্তা ভাবনা করছি।
স্থানীয় অনেকে বলেন, বাজার থেকে মাল্টা কিনে খেয়েছি। তার তুলনায় এখানকার বাগানে চাষ করা মাল্টার স্বাদ বেশি ভালো এবং মিষ্টি বলে মনে হয়েছে।
সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের কৃষি কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, আমাদের তত্ত্বাবধানে চাষী বাচ্চু মাল্টার চাষ করেছে। শুরু থেকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি। পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হলে এলাকার চাহিদার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য জেলার চাহিদার কিছুটা হলেও পূরণ করতে সক্ষম হবে। এছাড়া আশপাশের এলাকার চাষীরা মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যশোরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বাচ্চুর মাল্টা বাগান তৈরির পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। তিনি কৃষি বিভাগের প্রত্যক্ষ নজরদারিতে থেকে নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে মাল্টা চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন। আজ আড়াই বিঘা জমিতে মাল্টা ধরেছে। প্রতিটি গাছে গড়ে প্রায় ৪০ টিরও বেশি ফল আছে। উদ্যোক্তা বাচ্চুর পদক্ষেপ আশা করি আগামীতে দেশের মাল্টা চাষ সম্প্রসারণে দারুণ ভূমিকা রাখবে।
—————————–