অপূর্ব কুমারঃ- রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি
শিশুদের সু-চিকিৎসায় নির্মিত রাজবাড়ী পৌরসভার একমাত্র শিশু হাসপাতালটি চিকিৎসকের অভাবে দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর যাবৎ বন্ধ। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুরা। শিশুদের চিকিৎসায় অভিভাবকদের ছুটতে হচ্ছে দূর-দূরান্তে।
এদিকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হাসপাতালটি ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হচ্ছে। হাসপাতালের প্রবেশপথ এখন মাহেন্দ্রা গাড়ি ও লাকরি (খড়ি) ব্যাসায়ীর দখলে। ভবনের চারপাশ ও সিঁড়িতে বিভিন্ন ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্যের দেখা মিলছে।
অভিভাবক ও স্থানীয়দের দাবি, হাসপাতালটি বন্ধ থাকায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। এটি দ্রুত সংস্কার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং শিশুদের জন্য ডাক্তার নিয়োগ করে পুনরায় চালু করা প্রয়োজন।
সপ্তাহে একদিন শিশুদের টিকা কার্যক্রম ও মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও তালাবদ্ধ রয়েছে চিকিৎসকের কক্ষ, ওয়ার্ড ও বিশ্রামাগার। চিকিৎসকের কক্ষের চেয়ার-টেবিলে জমে আছে ধুলার আবরণ। দেখেই বোঝা যায় বহুদিন ব্যবহৃত হয় না কক্ষটি। দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারায় নোনা ধরেছে, ভেঙে গেছে জানালার কাঁচ। হাসপাতাল বন্ধ থাকলেও খোলা থাকে গেট। ফলে বারান্দা ও সিঁড়ির ছাদে দেখা মিলছে ময়লা আবর্জনা এবং নেশা জাতীয় দ্রব্যের উপকরণ।
রাজবাড়ী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের নতুন বাজার মুরগির ফার্ম সংলগ্ন রাজবাড়ী-বালিয়াকান্দি আঞ্চলিক সড়কের পাশে অবস্থিত একতলা বিশিষ্ট রাজবাড়ী পৌর শিশু হাসপাতাল। রাজবাড়ী পৌরসভা কর্তৃক পরিচালিত হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুর রশিদ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের পর বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। এরপর থেকেই অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে হাসপাতালটি।
এখন ময়লা আবর্জনায় একটি পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে হাসপাতালটি। সামনের অংশে পানি জমে অস্বাস্থ্যকর ও স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে পড়েছে। ভবনের প্রবেশপথে মাহেন্দ্রা ও খড়ি ব্যবসায়ীদের দখলে। তাছাড়া ভবনটির মূল গেইটের পাশে ময়লার স্তূপ। হাসপাতালটিতে রয়েছে ১টি চিকিৎসকের কক্ষ, ১টি ওয়ার্ড, ১টি বিশ্রামগার ও শিশুদের টিকা ও প্রসূতিদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনার ১টি কক্ষ।
কাঠ ব্যবসায়ী কাসেম সরদার বলেন, শিশু হাসপাতাল বন্ধ বলেই এখানে খড়ির ব্যবসা করছেন। তবে হাসপাতালটি চালু থাকলে তিনি এখানে ব্যবসা করতেন না। ডাক্তার থাকলে তাদের বাচ্চারাও চিকিৎসা নিতে পারতো। এখন শুধু মঙ্গলবার শিশুদের টিকা দিতে আসে।
অভিভাবক লিজা আক্তার, হাসি, শাহনাজ আক্তার ও স্থানীয় কামরুজ্জামান রুবেল বলেন, ডাক্তার না থাকায় দীর্ঘ প্রায় ৪-৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে পৌর শিশু হাসপাতালটি। ফলে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী। শিশুদের চিকিৎসার জন্য দূরে যেতে হচ্ছে। এখানে এখন শুধু টিকা দেওয়া হয়, অন্য কোনো চিকিৎসা হয় না। তাছাড়া হাসপাতালের পরিবেশ ভালো না। হাসপাতালে একজন ডাক্তার থাকলে তাদের বাচ্চাদের নিয়ে আর দূরে যেতে হতো না।
শিশুদের টিকা ও প্রসূতিদের স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ফেরদৌস আরা পারভীন বলেন, আগে এখানে একজন শিশু ডাক্তার বসতো। কিন্তু প্রায় ৪ বছর হাসপাতালে কোনো ডাক্তার বসে না। ফলে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। বর্তমানে হাসপাতালের অবস্থা ভালো না। হাসপাতালে ঢুকতে সমস্যা হয়। হাসপাতালটি সংস্কার করে চালু করলে রাজবাড়ীবাসী উপকৃত হবে।
রাজবাড়ী পৌর মেয়র আলমগীর শেখ তিতু বলেন, হাসপাতালটি দ্রুত চালুর বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। তার সময়কালে হাসপাতালটি পুনরায় চালু করা হবে বলে তিনি আশাবাদী।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মো. ইব্রাহিম টিটোন বলেন, পৌর শিশু হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। এটি চালুর উদ্যোগ নিলে রাজবাড়ী স্বাস্থ্য বিভাগ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। তারা চান রাজবাড়ীর শিশুরা চিকিৎসা পাক ও হাসপাতালটি পুনরায় চালু হোক।