মোঃ মনিরুজ্জামান।
১৯ মার্চ ২০২২ শনিবার ঢাকার সামরিক হাসপাতালে ( সিএমইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি।
মৃত্যুকালে এই প্রখ্যাত আইনজীবী এবং রাজনীতিবীদের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
নব্বই দশকের গণআন্দোলনের পর থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে ফেরার প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতির দায়ীত্ব পালন করেন তিনি পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে পুনরায় রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব নেন।
এবং ২০০১ সালে রাষ্ট্রপতির দায়ীত্ব থেকে অবসরে যান তারপর নিজ বাসভবনে নিরবতায় জীবন যাপন করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বার্ধ্যক্যজনিত কারণে অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
সাহাবুদ্দীন আহমদের মেয়ে জামাই অধ্যাপক আহাদুজ্জামান তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, শনিবার সকাল আনুমানিক ১০টা ২০ মিনিটে মৃত্যু হয় সাবেক এই রাষ্ট্রপতির।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করার পর রাষ্ট্রপতির পদে কে আসবে, নির্বাচন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কে থাকবেন- সেই প্রশ্নে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলো (তিন জোট) একমত হতে না পারায় প্রধান বিচারপতিকে সেই দায়ীত্ব দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়। আবার সুপ্রিম কোর্টে ফেরার শর্ত দিয়ে সাহাবুদ্দীন আহমদ তাতে রাজি হন।
পরবর্তীতে তিনি আবার প্রধান বিচারপতির দায়িত্বও পালন করেন এবং সংবিধানেও ব্যপক পরিবর্তন আনেন তিনি এবং চাকরির মেয়াদ শেষে ওই পদ থেকেই অবসরে যান তিনি।
পরবর্তীতে আবারও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সাহাবুদ্দীন আহমদ তখন ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন।
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি তাঁর কর্মজীবনে প্রথমে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ম্যাজিস্ট্রেট, মহকুমা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালের জুন মাসে তাঁকে বিচার বিভাগে বদলি করা হয়। তিনি ঢাকা ও বরিশালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি তাঁকে বাংলাদেশ হাইকোর্টের বিচারক পদে উন্নীত করা হয়।
১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সাহাবুদ্দীন আহমদকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ করা হয়। বিচারপতি হিসেবে তাঁর দেওয়া বহুসংখ্যক রায় প্রশংসিত। বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর ওপর তাঁর দেওয়া রায় দেশের শাসনতান্ত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক অনন্য ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত।
১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। তৎকালীন সরকার তাঁর সেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। ১৯৭৮ সালের আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
Leave a Reply