যশোর প্রতিনিধি:
গতকাল যশোরের শিশু হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া নবজাতক শিশুটিকে যশোর জেলা প্রশাসনের ততপরতায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (৭ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে মাগুরার শালিখা উপজেলার শতখালী গ্রাম থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। নবজাতককে ফের যশোর শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সন্তান ফিরে পাওয়ায় আনন্দে আত্মহারা তার পিতা-মাতা ও স্বজনরা। এদিকে শিশু চোর নারীকে আটক করতে পুলিশের ততপরতা অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল রবিবার (৬ মার্চ) যশোর শিশু হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন আট দিন বয়সী সন্তানের ছাড়পত্র নেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার খয়লা গ্রামের বাসিন্দা জনি হোসেন ও তার স্ত্রী আসমা বেগম। বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতিকালে অপরিচিত এক নারী শিশুটিকে কৌশলে তার নানীর কোল থেকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে পুলিশ। এরপর সোমবার দুপুরে ১ টার দিকে মাগুরার শালিখা উপজেলার শতখালী গ্রামের লোকজন স্থানীয় থানায় বাচ্চা পাওয়ার কথা জানায়। এরপর পুলিশ গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা আজম শেখের স্ত্রী আকলিমা আক্তার শান্তা জানান, তিনি আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি যশোরে আসার জন্য শালিখা বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি বাসে উঠেন। বাসটি দাঁড়িয়ে থাকাকালে এক অপরিচিত নারী গরম পানি আনতে দোকানে যাবে বলে বাচ্চাটিকে একটু ধরতে বলেন। বাচ্চাটি দিয়ে যাওয়ার পর ওই নারী আর ফেরেননি। সে কারণে তিনি বাস থেকে নেমে ওই নারীকে খুঁজতে থাকেন। না পেয়ে ঘটনাটি ফোন করে পরিবারের সদস্যদের জানান। এসময় তার পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলে। এরপর স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বরদের বিষয়টি জানানো হলে তারা পুলিশে খবর দেয়। দুপুর ১টার দিকে শালিখা থানার পুলিশ গিয়ে শিশুটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে।যশোর শিশু হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সৈয়দ নূর-ই-হামীম জানান, খবর পেয়ে তারা শিশুটির পিতাকে নিয়ে শালিখা থানায় যান। সেখানে যশোরের পুলিশ সদস্যরাও ছিলো। এরপর তারা শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালে ফিরে আসেন এবং ফের শিশুটিকে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করেছেন। তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় না খেয়ে থাকায় শিশুটির অবস্থার অবনতি হয়েছে। চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অবস্থার উন্নতি না হলে শিশুকে রেফার করা হবে।
এদিকে একদিন পর সন্তানকে ফিরে আনন্দে আত্মহারা তার পিতা-মাতা ও স্বজনরা।
শিশুটির মা আসমা বেগম বলেন, আমার জানটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আমি আমার বাচ্চাকে পাইছি, আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। প্রশাসনের লোকজন চেষ্টা করেছে। আল্লাহর নিকট তাদের জন্য দোয়া করেন। আমার সন্তান ফিরায় দিছে, এবং আর কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয়। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।শিশুটির পিতা মেহেদি হাসান জনি বলেন, ছেলেটা চুরি হওয়ার আমরা ভেঙ্গে পড়েছিলাম। হাসপাতাল ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আমি ছেলেকে ফেরত পেয়েছি। আমরা এখন খুব খুশি। যে আমার বাচ্চা চুরি করেছে তাকে যাতে পুলিশ ধরতে পারে তার জন্য আমি সবরকম সহযোগিতা করব।
উল্লেখ্য আসমা বেগম গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের কুইন্স নামে একটি ক্লিনিকে সন্তান প্রসব করেন। বাচ্চাটি প্রসবের পর দুর্বলতাজনিত অসুস্থ হওয়ায় তাকে পরের দিন যশোর শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো।